,

বিউটি হত্যা মামলায় বাবুলসহ ৩ আসামীর জামিন শুনানী অনুষ্ঠিত

জুয়েল চৌধুরী ॥ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডুরা গ্রামে চাঞ্চল্যকর বিউটি হত্যা মামলায় বাবুলসহ ৩ আসামীর জামিন শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করায় আগামী ৮ মে পুনাঙ্গ শুনানীর জন্য তারিখ ধার্য্য করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আমজাদ হোসেনের আদালতে তাদের জামিন শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক চৌধুরী ও মোঃ মাহফুজ আহমেদ। আসামী পক্ষে ছিলেন মোঃ মুহিবুর রহমান। মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৬ মার্চ ধর্ষণের পর হত্যা করে বিউটি আক্তারের লাশ শায়েস্তাগঞ্জ হাওরে ফেলে যায় বাবুল ও তার সহযোগিরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ১৭ মার্চ কিশোরীর পিতা সায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবি ওরফে আবুনিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২১ মার্চ কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করে। মামলার এজহারে বলা হয় শায়েস্তাগঞ্জের ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের দিনমজুর সায়েদ আলীর কন্যা স্থানীয় মোজাহের উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিউটি আক্তারকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো বাবুল মিয়া। এক পর্যায়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করে বিউটি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২১ জানুয়ারি বিউটিকে তুলে নিয়ে ১ মাস আটক রেখে ধর্ষণ করে বাবুল মিয়া। পরে কৌশলে বিউটিকে বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ৪ মার্চ হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। সায়েদ আলীর দায়ের করা মামলায় বাবুল, তার মা কলম চাঁনসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ মামলার মোড় ঘুড়ে যায়। পরে পিতা সায়েদ আলী ও চাচা ময়না মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। পরে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের অকপটে স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে বিউটি হত্যার মূল রহস্য। গত ৪ এপ্রিল বিউটির নানী ফাতেমা বেগমকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বিউটি হত্যকা-ের রহস্য উদঘাটনে আরো একধাপ এগিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ১৮ মার্চ বিউটির পিতা সায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ৩০ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়াকেও। হত্যাকান্ডের ঘটনাটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে সারাদেশ। পুলিশও হত্যার মোটিভ উদঘাটনে মরিয়া হয়ে ওঠে। প্রথম দফায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়। বদল করা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা। দ্বিতীয় দফায় চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মানিকুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব নেয়ার ১ সপ্তাহের মাঝেই হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হন। এরপর থেকে বাবুল, তার মা কলম চান, বিউটির পিতা সায়েদ আলী, চাচা ময়না মিয়া কারাগারে রয়েছে। এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে সায়েদ আলীর দায়েরকৃত হত্যা মামলা মিথ্যা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন এবং পুলিশ বাদি হয়ে সায়েদ আলী ও ময়না মিয়াসহ কয়েকজনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত দীর্ঘ শুনানী শেষে উভয় মামলায় শুনানীর তারিখ ধার্য্য করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর